সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাঙালির শাক্ত সঙ্গীত - ডঃ তমাল দাশগুপ্ত

কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ মধ্যযুগে কালীমূর্তি তৈরি করছেন এবং তারপরের চারশো বছরে বাঙালি কর্তৃক মা কালীর উপাসনা যেভাবে দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ছে, তা থেকে স্পষ্ট যে এটি একটি ধর্মসংস্কার আন্দোলন ছিল, এবং মুষ্টিমেয় ভাবুকের ওপরতলা থেকে প্রেরিত সংস্কার নয়, ইংরেজ আমলের বিধবাবিবাহের মত, এ ছিল গণসংস্কার। সংস্কার মানেই তো শুধু অতীতকে ভাঙা নয়, কেবল রীতিনীতিকে ধ্বংস করা নয়, অনেকসময় অতীতকে নতুনভাবে রক্ষা করাও।

বাঙালি প্রাচীনকাল থেকেই মাতৃকা উপাসক, তন্ত্রে আর সাংখ্যে যাকে প্রকৃতি বলে, বাঙালি সেই শক্তির উপাসক। চার হাজার বছরের পুরোনো পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে অনেকগুলি মাতৃকামূর্তি পাওয়া গেছে। কিন্তু এই বাঙালি জাতি এতগুলো ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে গেছে, যে তার ইতিহাস ছিন্নপত্রের মত, যার সর্বাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। প্রাচীনযুগে মাৎস্যন্যায় এসেছিল। মধ্যযুগে বখতিয়ার খিলজিরা এসেছেন, নালন্দা সহ সবকটি বিশ্ববিদ্যালয় পুড়ে গেছে। ফলে একটানা ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু জমি যেখানে বহু শতাব্দী ধরে উর্বরা, সেখানে সামান্য যত্নেই সোনার শস্য ফলে, সেটা শাক্তসঙ্গীতের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়।
ধর্মবিস্তার কখনই ধর্মসঙ্গীত ছাড়া সম্ভব হয়নি ভারতে, বেদের সময় থেকেই। সামগান ছাড়া বেদাচার সম্ভব ছিল না। চর্যাপদ জানাচ্ছে বুদ্ধনাটকের অভিনয়ে নৃত্যগীত হত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারে বৈষ্ণব পদাবলীর কি অসামান্য ভূমিকা ছিল, আমরা জানি (স্বয়ং চৈতন্যদেব জগন্নাথ অষ্টকম নামে একটি গান রচনা করেছিলেন)। তারও আগে আদি শঙ্করাচার্য নিজের ধর্ম-আন্দোলনের প্রচারে সঙ্গীতের ব্যবহার করেছিলেন। মা দুর্গার উদ্দেশ্যে লেখা একটি দারুণ সঙ্গীত আছে আদি শঙ্করাচার্যের, ভবানী অষ্টকম। এই সেদিনের ব্রাহ্ম ধর্মও ব্রাহ্মসঙ্গীতের ওপরে গুরুতরভাবে নির্ভর করেছিল, রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ, সবাই ব্রাহ্মসঙ্গীত রচনা করেছেন। হরিচাঁদ গুরুচাঁদের মতুয়া আন্দোলন থেকে একদম হালের প্রভাতরঞ্জন সরকারের আনন্দমার্গ কিংবা অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ, এঁরা সবাই ওতপ্রোতভাবে সঙ্গীতের ব্যবহার করেই আন্দোলন চালিয়েছেন।



এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, আদিকাল থেকে মাতৃকা উপাসক, শক্তির উপাসক বাঙালির মধ্যে শাক্ত সঙ্গীতের অবিচ্ছিন্ন ধারা খুঁজে না পাওয়া অতীব দুঃখের। কিন্তু সে দুঃখ লাঘব হয়ে যায় আমরা যখন রামপ্রসাদকে পাই। অনেকটা একা বঙ্কিম এসে যে ফল্গুধারায় একদিন বাংলা ও বাঙালিকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, রুক্ষ ও ধূসর জমি এক লহমায় বানভাসি হয়েছিল (তা থেকে অবশ্য এ-ও প্রমাণ হয় যে এই ভূমি প্রস্তুত ছিল, বহুযুগ ধরে পূর্বমানুষদের সঞ্চিত প্রজ্ঞার ফলে), সেভাবেই রামপ্রসাদ এবং কমলাকান্ত এসে রাতারাতি বাংলার শাক্ত সঙ্গীতকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিলেন।


প্রথমেই বলা দরকার, এই শাক্ত সঙ্গীতের ওপরে শুধু তান্ত্রিক (বৌদ্ধযুগে যা বজ্রযান নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল) প্রভাব নয়, সহজিয়া/সহজযানী প্রভাবও যথেষ্ট। আশ্চর্য বিষয়, কারণ রামপ্রসাদের সময় চর্যা বিস্মৃত, রামপ্রসাদের অনেক পরে হরপ্রসাদ নেপাল থেকে চর্যা আবিষ্কার করবেন। কিন্তু কিভাবে একটি জাতির শেকড় মাটির গভীরে থেকে সে জাতির শরীর, তার শাখাপ্রশাখাকে পুষ্ট করে, এ তারই এক অকাল্ট এবং আশ্চর্য উদাহরণ। চর্যার কথা, চর্যার সন্ধাভাষার কথা জানতেন না রামপ্রসাদ। কিন্তু এই গানটা দেখুন,
যে দেশেতে রজনী নাই, সে দেশের এক লোক পেয়েছি।
আমার কিবা দিবা কিবা সন্ধ্যা, সন্ধ্যারে বন্ধ্যা জেনেছি।। …
সোহাগা গন্ধক মিশায়ে, সোনাতে রঙ ধরায়েছি।
মণি মন্দির মেজে দিব, মনে এই আশা ধরায়েছি।।
প্রসাদ বলে ভক্তি মুক্তি, উভয়কে সাথে ধরেছি।
এবার শ্যামার নাম ব্রহ্ম জেনে, ধর্ম কর্ম সব ছেড়েছি।
এই যে ধর্মকর্ম সব ছেড়ে নামব্রহ্ম অবলম্বন করা, এটি মধ্যযুগের ভক্তি আন্দোলনের বড় বৈশিষ্ট্য তো বটেই। কিন্তু আদতে সহজিয়া আন্দোলন থেকেই মূলত এই প্রথা এসেছিল। একটি নামবীজই মোক্ষলাভে যথেষ্ট, জটিল সাধনা পদ্ধতির প্রয়োজন নেই, তন্ত্র-আন্দোলনের ঘরানায় সহজযানের এইটি একরকমের প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন। সহজিয়ারাও তান্ত্রিক, ভুললে চলবে না, কিন্তু সহজতান্ত্রিক। শাক্ত এবং সহজিয়ার মেলবন্ধন রামকৃষ্ণ আন্দোলনও দেখিয়েছে বারবার, রামকৃষ্ণ কথামৃত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে ওটিকে একটি আদ্যোপান্ত সহজিয়া টেক্সট মনে হয়েছে আমার। রামকৃষ্ণ নিজে শাক্তসঙ্গীতের প্রবল অনুরাগী ছিলেন, আমরা জানি। রামপ্রসাদের এই গানটি রামকৃষ্ণের বড় প্রিয় ছিল।
কে জানে কালী কেমন, ষড় দর্শনে না পায় দরশন।
আত্মারামের আত্মা কালী প্রমাণ প্রণবের মতন
সে যে ঘটে ঘটে বিরাজ করে ইচ্ছাময়ীর ইচ্ছা যেমন।
কালীর উদরে ব্রহ্মাণ্ড ভাণ্ড প্রকাণ্ড তা বুঝ কেমন,
যেমন শিব বুঝেছেন কালীর মর্ম, অন্য কেবা জানে তেমন।১

গানটির ইঙ্গিত স্পষ্ট সহজের দিকে। রামকৃষ্ণ অন্যত্র বলেছেন “আর কাজ নাই জ্ঞান-বিচারে, দে মা পাগল করে। দেখ, ঐটে আমার ঠিক ভাব” (কথামৃত প্রথম খণ্ড পৃ ২৭৬)। তাত্বিক কচকচির বদলে আপামত বাঙালি এই সহজিয়া সন্ধানকেই শ্রেষ্ঠ মেনেছে। রামপ্রসাদের গানে দেখি, শাক্তসাধনাসঙ্গীত হিন্দুসমাজে জাতপাতের বিভাজনের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী। এবং শুধু প্রতিবাদী নয়, আউটকাস্ট বা সমাজবহির্ভূত মানুষ সেখানে প্রকৃত সাধকের মেটাফর।
আমায় ছুঁয়ো না রে শমন আমার জাত গিয়েছে।
যে দিন কৃপাময়ী আমায় কৃপা করেছে।।
শোন্‌ রে শমন বলি আমার জাত কিসে গিয়েছে।
আমি ছিলেম গৃহবাসী, কেলে সর্বনাশী আমায় সন্ন্যাসী করেছে।।
মন রসনা এই দুজনা, কালীর নামে দল বেঁধেছে।
ইহা করে শ্রবণ, রিপু ছয়জন ডিঙ্গা ছেড়ে চলে গেছে।।
যে জোরে একঘরে আমি, সে জোর আমার বজায় আছে।
প্রসাদ বলে বেজাত মোলে যম যেন আসে না কাছে।।
এখানে শক্তি উপাসনা সমস্ত জাতপাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে আরেকটি সহজিয়া বৈশিষ্ট্যের পরিচয় রেখেছে।
বাঙালি শাক্ত, শক্তি উপাসনা করে। বাঙালি তন্ত্রেরও স্রষ্টা। এই ভূমি কোনওদিনই বেদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ মানে নি। সাংখ্যকার বেদের দোহাই দিয়ে বেদেরই উচ্ছেদ করেছেন, বঙ্কিম লক্ষ্য করেছিলেন।
রামকৃষ্ণ একজায়গায় বলছেন “কি জানো, এখন কলিযুগে বেদমত চলে না। একজন বলেছিল, গায়ত্রীর পুরশ্চারণ করব। আমি বললুম, কেন? কলিতে তন্ত্রোক্ত মত। তন্ত্রমতে কি পুরশ্চরণ হয় না?”২
প্রসঙ্গে ফিরি। বাংলার শাক্ত ভাবান্দোলনের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল, বৈষ্ণব ভক্তির সঙ্গে এর কোনও বিরোধ নেই। রামপ্রসাদ এবং কমলাকান্ত দুজনেই বৈষ্ণব সঙ্গীত রচনা করেছেন। রামকৃষ্ণ স্বয়ং নিজে বৈষ্ণব সঙ্গীতের এবং বৈষ্ণব ধর্মতত্বের বিশেষ ভক্ত ছিলেন, কথামৃত পড়লে দেখা যায়।
এদিকে চর্যাগানের একটি পৌনঃপুনিক বৈশিষ্ট্য হল স্থূল বস্তুজগত থেকে আধ্যাত্মিক উপমা আহরণ করা। রামকৃষ্ণ পরমহংসের আরেকটি প্রিয় রামপ্রসাদী গান ছিল এরকম
গুরুদত্ত গুড় লয়ে, প্রবৃত্তি তায় মশলা দিয়ে;
জ্ঞান শুঁড়িতে চোঁয়ায় ভাঁটী পান করে মোর মন-মাতালে।
মূল মন্ত্র যন্ত্রভরা, শোধন করি বলে তারা
প্রসাদ বলে এমন সুরা খেলে চতুর্বর্গ মেলে। ৩
চর্যার যুগে সিদ্ধাচার্য লুইপা ছিলেন শুঁড়িখানার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁর গুরু বা দীক্ষাদাত্রী ছিলেন শুঁড়িনী লোকডাকিনী।৪ মাছের নাড়িভুঁড়ি খেতে ভালোবাসতেন লুইপা, সেটি খুব সম্ভবত সুরার অনুপান (মদের চাট) হিসেবে। আমরা জানি, সহজতান্ত্রিক সাধনায় মদ্যপানও একটি আঙ্গিক।
বাঙালির সাংস্কৃতিক শেকড়ে থাকা প্রকৃতি-পুরুষ দ্বৈতবাদ বাঙালিকে সাংস্কৃতিকভাবে সংজ্ঞায়িত করে। সম্পর্কে রামকৃষ্ণ বলছেন,
“যোগমায়া অর্থাৎ পুরুষ প্রকৃতির যোগ। যা কিছু দেখছ সবই পুরুষ-প্রকৃতির যোগ। শিবকালীর মূর্তি, শিবের উপর কালী দাঁড়িয়ে আছেন। শিব শব হয়ে পড়ে আছেন। কালী শিবের দিকে চেয়ে আছেন। এই সমস্তই পুরুষ-প্রকৃতির যোগ। পুরুষ নিষ্ক্রিয়, তাই শিব শব হয়ে আছেন। পুরুষের যোগে প্রকৃতি সমস্ত কাজ করছেন। সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় করছেন!
রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তিরও মানে ওই।” ৫
ইংরেজি সাহিত্যে মেটাফিজিক্যাল উইট একটি বিখ্যাত জিনিস। কোনও চিরাচরিত ধারণাকে নতুনভাবে, চমকে দেওয়ার মত প্রকাশভঙ্গির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করাই হল “উইট”। আলেকজান্ডার পোপ উইটের সংজ্ঞা এভাবে দিয়েছিলেনঃ হোয়াট অফট ওয়াজ থট বাট নে’য়ার সো ওয়েল এক্সপ্রেসড। আমি বলতে চাই, বাঙালির শাক্ত সঙ্গীতেরও নিজস্ব “উইট” ঘরানা আছে। প্রকৃতি-পুরুষ দ্বৈতবাদের চিরায়ত কাঠামোকে নিয়ে কমলাকান্ত লিখেছেনঃ “আর কিছু নাই শ্যামা মা তোমার কেবল দুটি চরণ রাঙা। শুনেছি তাও নিয়েছেন ত্রিপুরারি, অতেব হৈলাম সাহস ভাঙা।।”
এটি অত্যন্ত উচ্চস্তরের উইট। ঈশ্বর হলেন একটা অ্যাবসেন্স, পশ্চিমে বর্তমানে বিখ্যাত দার্শনিক জিজেকের নেগেটিভ থিওলজি জানাচ্ছে। মার্ক্সেরও এরকমই উক্তি আছে, যে ধর্ম হল হৃদয়হীন জগতের হৃদয়, আত্মাহীন পরিবেশের আত্মা। যেহেতু মানবসত্তার কোনও বাস্তব অস্তিত্ব নেই, ধর্ম হল মানবসত্তার কাল্পনিক বাস্তবায়ন। কিন্তু এই বাস্তবায়নে একটা বড় গ্যাপ, একটা শূন্যস্থান থেকে যায়, সাব্জেক্টিভিটির একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকা সেই শূন্যতা আমাদের অস্তিত্বকে এক বিষাদে আচ্ছন্ন করে। চিন্তাবিদ লাকাঁর সাইকো-অ্যানালিসিসও বলছে, মানব অস্তিত্বের কেন্দ্রেই রয়েছে শূন্যতা, যাকে লাকাঁ রিয়েল বলছেন, যা বাক্য ও মনের অগোচর, যাকে শব্দে প্রকাশ করা যায় না। এইসব জটিল দার্শনিক চিন্তা তো পশ্চিমের দার্শনিকরা করেছেন, কিন্তু এখানে কমলাকান্ত যেভাবে নিঃস্ব, রিক্ত ঈশ্বরসাধকের ছবিটা ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতি-পুরুষ দ্বৈতবাদের চিরাচরিত ছবির মধ্য দিয়ে, সে অসাধারণ। মায়ের পা দুটি ছাড়া তো সত্যিই বাঙালির আর কিছু নেই, কিন্তু সে পা দুটি বাবা ভোলানাথ ইতিমধ্যেই দখল করে বসে আছেন, ফলে তাও আর অবশিষ্ট নেই। মধ্যযুগের বাঙালি নিঃস্ব, রাজক্ষমতা বিজাতীয় তুর্ক-পাঠান-মোগলদের হাতে। কোনওমতে গোপনে গভীর রাত্রে সে তার শক্তি উপাসনা করে থাকে। তেমন সময়ে বাঙালির কাছে মানব অস্তিত্বের কেন্দ্রে থাকা শূন্যতা শুধু দার্শনিক নয়, দস্তুরমত রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্টেটমেন্টও বটে।
একদম একই রকমের বক্তব্য রেখেছেন রামপ্রসাদঃ “আশা ছিল মাতৃপদ, পিতা তাও দখল করেছে”।
এরপরে বঙ্কিমের বন্দে মাতরমই হোক, বা রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের সময় “আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি” হোক, বা চারণকবি মুকুন্দদাসের “মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমররঙ্গে” – বাংলার সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে শাক্ত সঙ্গীতের যোগদান সাংস্কৃতিক ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তবে সে ভিন্ন প্রসঙ্গ, আরেকদিন আলোচনা করা যাবে।

তথ্যসূত্র:
১। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত (উদ্বোধন কার্যালয়), প্রথম খণ্ড পৃ ৩৪।
২। ওই প্রথম খণ্ড, পৃ ২৭৯।
৩। ওই প্রথম খণ্ড, পৃ ৪২।
৪। অলকা চট্টোপাধ্যায়। চুরাশি সিদ্ধর কাহিনী।
৫। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত (উদ্বোধন কার্যালয়), প্রথম খণ্ড পৃ ২৪৬-৭।
(লেখক : দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজির অধ্যাপক)

লিঙ্ক :    বিশ্ব বাংলা সংবাদ 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

চৈতন্য হত্যার অনুসন্ধানে - তমাল দাশগুপ্ত

প্রথম পর্ব  পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের পাণ্ডাদের মধ্যে একটা ভীষণ প্রবাদ চালু আছে, মালীবুড়োর শ্রীচৈতন্যের অন্তর্ধান রহস্য বইটা আমাদের জানাচ্ছে। এই পাণ্ডারা অনেকেই গর্ব করে বলে যে চৈতন্যকে তাদের পূর্বপুরুষেরা হত্যা করেছিল। কেন করেছিল? এরা বলে, এর কারণ চৈতন্য নাকি বাংলার মুসলমান শাসকের চর ছিলেন! আর তাই চৈতন্যর উড়িষ্যায় আগমনের পরেই প্রথমবারের জন্য গৌড়ের মুসলমান শাসক উড়িষ্যায় সফলভাবে হামলা করতে পেরেছিল। সাহসীজন এ ব্যাপারে পুরীতে গিয়ে উড়িয়া পাণ্ডাদের মধ্যে খোঁজখবর করে দেখতে পারেন এরকম একটা কথা চালু আছে কি না । চৈতন্য আন্দোলনের ফলে উড়িষ্যায় মুসলমান হামলা হয়েছিল, এই বক্তব্য এমনই জোরালো হয়ে ওঠে ক্রমে, যে প্রভাত মুখার্জি তার মেডায়েভাল বৈষ্ণবিজম ইন ওড়িশা গ্রন্থে এটিকে রীতিমত তথ্য ও যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করেছেন, অর্থাৎ এটি উড়িয়ে দেওয়ার মত অকিঞ্চিতকর প্রলাপ নয়, অনেক উড়িষ্যাবাসী এতে বিশ্বাস করেন। ইন ফ্যাক্ট খোঁজ নিলে দেখবেন, অনুরূপ চাপা চৈতন্যবিদ্বেষ বাংলাভাষী হিন্দুত্ববাদীদের অনেকের আছে, এরাও একইরকম মনে করে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে চৈতন্যর সাম্যময় ভক্তি আন্দোলনের ফলে পাণ্ডাদের মৌরসীপ

শিকড়ের সন্ধানে-বেগুনিয়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দিরেরডায়েরী; লিখেছেন শ্রী তিলক পুরকায়স্থ

শিকড়ের সন্ধানে-বেগুনিয়ার সিদ্ধেশ্বর মন্দিরের ডায়েরী। পশ্চিম বর্ধমান জেলার প্রান্ত বিন্দু বরাকর শহর, যার বহু প্রাচীন নাম বেগুনিয়া।এর পরেই শুরু দামোদর নদ এবং ঝাড়খন্ড রাজ্যের ধানবাদ জেলার।এখানে পৌঁছুতে হলে যে কোনো ট্রেন এ চেপে আসানসোল স্টেশন নেমে যান।ধর্মতলা থেকেও প্রচুর ভলভো বাস ছেড়ে আসানসোল আসে।আসানসোল থেকে বরাকর যাবার অগুনতি বাস ও মিনিবাস আছে।আবার black diamond/ coal field এক্স চাপলে, সোজা নামুন বরাকর।এখান থেকে পায়ে হেঁটে বা রিক্সা করে পাঁচ মিনিটে পৌঁছবেন গন্তব্যে। দামোদর নদের প্রায় কোল ঘেঁষে আছে এক সুপ্রাচীন-ঐতিহাসিক, নান্দনিক এবং অপরিসীম প্রত্নতাত্বিক মূল্যের মন্দিররাজি।বর্তমানে চারটি অপূর্ব সুন্দর পাথরের দেউল দাঁড়িয়ে আছে(আগে পাঁচটি ছিল), যার সমষ্টিগত নাম সিদ্ধেশ্বর মন্দির।এবং আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাই যে বাংলাদেশের প্রাচীনতম পাথরের দেউল হচ্ছে, এদের মধ্যে যেটি সামনের দিক থেকে শেষ বা চতুর্থ এবং ক্ষুদ্রতমটি। ওড়িশা রেখা বা শিখর রীতিতে তৈরি এই অপূর্ব সুন্দর দেউল গুলি কালের করাল গ্রাস জয় করে এখনো টিঁকে আছে।এ আমাদের পরম সৌভাগ্য।কিন্তু বাঙালি জাতির চরম ঔদাসীন্য, ঠুঁটো জগন্নাথ কতৃপক্ষ,

বাংলায় ব্রাহ্মণ

একদা এঁরা বাংলায় আসেন, রাজাদের পৃষ্ঠপোষণায় জমিজিরেত ও হরেক সুবিধা ভোগ করেন। অতঃপর আদিশূর নামে আধা-কল্পিত এক চরিত্রকে ঘিরে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা আরও বাড়িয়ে নেন, সেই অনুযায়ী স্মৃতি, শাস্ত্র ও কুলজিগ্রন্থ রচনা করেন। ক্রমশ বৈদিক, রাঢ়ী, বারেন্দ্র, কুলীন, ভঙ্গ ইত্যাদি হরেক ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। এঁরাই  বাঙালি ব্রাহ্মণ! কুণাল চক্রবর্তী ২৭ মে, ২০১৮, ০০:৩৪:৩৪ ব্রাহ্মণরা বাংলার আদি অধিবাসী নয়। বস্তুত দীর্ঘ দিন বাংলা ব্রাহ্মণদের প্রভাবসীমার বাইরে ছিল। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিকেরা লক্ষ করেছিলেন, ‘আর্য’রা পূর্ব ভারতে কিছুটা দেরিতে পৌঁছেছিল এবং তাদের অগ্রগতি স্থানীয় মানুষ প্রতিরোধ করেছিল। বাংলা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণ্য বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল, কিন্তু প্রক্রিয়াটি খুব সহজ হয়নি। ব্রাহ্মণ্যবাদ যে ক্রমশ পূর্ব দিকে বিস্তৃত হচ্ছিল, প্রাচীন ব্রাহ্মণ্য সাহিত্যে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। অথর্ব বেদেই মগধ ও অঙ্গের প্রথম নিঃসংশয় উল্লেখ আছে। এই গ্রন্থটির মতে এ দুটি ছিল ব্রাত্যদের দেশ। বঙ্গের প্রথম দ্বিধান্বিত উল্লেখ পাই ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থে