পশ্চিমবঙ্গে বাজার গরম এই নিয়ে। অর্ধেকের বেশি লোকের কোন ধারণাই নেই কে এই
গোর্খা আর কি তাদের চাহিদা? আর কতটাই চাইছে? তাদের এই দাবি কতটা সমর্থন যোগ্য?
এই নিয়েই কিছুটা লেখা...
ভনিতা না করে শুরু করে দেই-
যদি উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক চিত্রটা খেয়াল করি তাহলে সেটা অনেকটা এই রকম-
সেখানে গোর্খারা, রাজবংশিরা দাবি করছে তাদের নিজস্ব রাজ্যের জন্য। আর তাদের এই
দাবির লক্ষ্যে আছে সাতটি জেলা
· * জলপাইগুড়ি (তরাই এবং ডুয়ারস নিয়ে)
· * কোচবিহার
· * দার্জিলিং
· * উত্তর দিনাজপুর
· * দক্ষিণ দিনাজপুর
· * মালদা
· * কালিংপং
এর মধ্যে গোর্খাদের দাবি দার্জিলিং, কালিংপং, তরাই আর দুয়ারস।
এবার দেখি সেখানে তাদের জনসংখ্যার বিন্যাস কিরূপ?
দার্জিলিং এর কথা ধরলে দেখা যায়
পাহারি অঞ্চল গুলোতে গোর্খারা সংখ্যায় বেশি। যদিও পাহাড় থেকে নেমে সমতলে অর্থাৎ
শিলিগুড়িতে আসলেই ছবিটা বদলে যায়। সেখানে ৭৫%ই বাঙালি এবং খুব বেশি হলে ১৫% গোর্খা।
এতেও একটা গল্প থেকে গেলো। কি সেই গল্প? অনুপ্রবেশের গল্প। ভারত নেপাল সীমান্ত
অনুপ্রবেশকারীদের জন্য মুক্তাঞ্চল। সেখান দিয়ে নেপালিরা অবলীলায় ভারতে আসছে এবং
আস্তানা গেরে বসছে। আর সেই জন্যই সংখ্যায় বাড়ছে।
এবার যদি জলপাইগুড়ির প্রসঙ্গে আসি, মানে ওই তরাই আর ডুয়ারস
এর কথা, তাহলে মেরেকেটে ৩০%নেপালি পাওয়া যাবে। বাকি ৭০% বাঙালি এবং স্থানীয় পাহারি
উপজাতি। এবার ভাবুন কিভাবে তাদের এই দাবি মেনে নেওয়া যায়!!!
এবার বলি রাজবংশিদের দাবিতে, তাদের দাবি পশ্চিমবঙ্গের
৬ জেলা (আগে যে সাত জেলার নাম উল্লেখ
করেছি সেই পুরোটা) এবং তার সাথে আসামের পশ্চিম অংশ নিয়ে তাদের গ্রেটার কোচবিহারে
দাবি।
কি কি প্রতিবন্ধকতা আছে তাদের দাবি মানতে গেলে? কেন গোর্খাল্যান্ড হবে না, হতে দেওয়া যায় না।
· এবার যদি গোর্খাল্যান্ডকে সাপোর্ট
করতে হয় তাহলে গ্রেটার কোচবিহার এবং বোরোল্যান্ডকেও সাপোর্ট করতে হয়। কিন্তু তাহলে
দেখা যাচ্ছে বোরোল্যান্ড আর গোর্খাল্যান্ড এর সীমা একে অপরের উপর পরে যাচ্ছে।
অর্থাৎ হ য ব র ল
· খুব স্বাভাবিক ভাবেই শিলিগুড়ি
গোর্খাল্যান্ড এর মধ্যে যাবে না, কারণ আগেই বলেছি ওখানে গোর্খা নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে
গোর্খারা শিলিগুড়ি দাবি করে?
· ভারত সস্বাধীনের সময় শ পাচেক
স্থানীয় রাজ্য (princely state) ছিল। আজ যদি গোর্খাল্যান্ড হয় তাহলে বাকিরাও দাবি জানাবে। সব কটি
পাহারি জাতি তার রাজ্য চাইবে। আর তার ফলে হবে এক বিশৃঙ্খলা।
· গোর্খাদের এমন বেশি জনসংখ্যা নয় যে তাদের অখান থেকে
রাজ্যসভার একজন এম পি নির্বাচন করা যায়। সেই জন্যই শিলিগুড়ির দিকে চোখ, এবং একই
সাথে তরাই আর ডুয়ারস।
· ভারতের জনসংখ্যার হিসাবটা দেখলেই বোঝা যায় ১৯৭১ থেকে কিভাবে
অনুপ্রবেশ হয়েছে নেপাল থেকে এবং তাঁরা এখন ওখানে বসে আছে। এবং নেপাল আর ভারতের দুই
দেশের সাথেই সম্পর্ক রেখে চলছে।
· রাজ্য ছোটো হলে পরিচালনায় সুবিধে হয় কিন্তু সেই ছোটো রাজ্য যদি
অনেক হয়ে যায় তাহলে কেন্দ্র থেকে জনগণের টাকা যে জলের মতো বেরিয়ে যাবে সেটা বলার অপেক্ষা
রাখেনা।
· কয়েকটি ছোটো রাজের উদাহরণ দেই
সিকিম – মোট জন সংখ্যার ০.০৫%
মিজোরাম – ০.০৯%
আরুনাচল প্রদেশ- ০.১১%
নাগাল্যান্ড – ০.১৬%
মনিপুর- ০.২২%
ত্রিপুরা – ০.৩০%
হিমাচল প্রদেশ – ০.৫৭%
উত্তরাখণ্ড ০.৮৪%
গোয়া – ০.১২%
এবার গোর্খারা যে অঞ্চলটা চাইছে সেটা হল ৩ টি মহকুমা। তাই নিয়ে কখনও রাজ্য হয়?
আর জন সংখ্যা - ০.০৮% আর আয়তনে ভারতের মোট আয়তনের ০.০২৫% । প্রসঙ্গত গোয়া ভারতের সবথেকে ছোট রাজ্য এবং প্রস্তাবিত গোর্খাল্যান্ড তার থেকেও ছোট।
এবার ভাবুন কি ভাবে হয় গোর্খাল্যান্ড?
এমনিতেই ভারতবর্ষ অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত সমস্যায় জর্জরিত, সেইখানে ভারত নেপাল ওপেন করিডর যে আরও চওড়া হবে টা বলার অপেক্ষা রাখে না। নেপালে মাওবাদী আছে, সেই মাওবাদী যে আবার মাথা চারা দেবে না তা কে বলতে পারবে?
একে তো সিপিএম সরকার ভোটের লোভে গোর্খাদের ভোটার কার্ড করে দিয়ে গেছে, আর তার ফল এখন দেখতে পারছি।
অনেকে বলতে পারেন মিজো নাগারা যেমন রাজ্য পেয়েছে ঠিক তেমনই এরাও পেতে পারে, না পেতে পারে না কারণ গোর্খা বহিরাগত। তাদের কোন অধিকার নেই।
গোর্খারা কি আদৌ সিপিএম কে ভোট দিতো ?
উত্তরমুছুন